বিখ্যাত কিন্তু ভৌতিক- ঘুরে আসতে পারেন আপনিও | Rahasyo Goyenda Vhut

এ দেশে ভূত নিয়ে লেখা গল্প, উপন্যাসের দারুণ কাটতি; বিশেষ করে কিশোর পাঠক এ ধরনের বই বেশি পছন্দ করে। আবার এই বয়সেই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভূতের ভয়ে তটস্থ থাকে। কিন্তু তাতে কী! ভূতের গল্প পড়তে বা শুনতে তাদের ক্লান্তি নেই একইভাবে বড়দের কথাও বলা যায়। সিংহভাগ মানুষই মুখে ‘ওসব ভূত-টুত বলে কিছু নেই’ যতই বলুন না কেন, মনে মনে ঠিকই ভূত এড়িয়ে চলতে চান। আবার অনেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ভূত আসলেই নেই। সব বোগাস! কিন্তু যারা নিজে জীবনের কোনো না কোনো সময় ভূতের পাল্লায় পড়েছেন তারা একে অস্বীকার করতে পারেন না। ফলে ভূত নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।




ভ্রমণপিপাসুদের কথাই ধরা যাক, বছরের বিভিন্ন সময় দেশ অথবা দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তারা বেড়াতে যান। এ সময় তারা ব্যাতিক্রম কিন্তু দর্শনীয় স্থান খোঁজার চেষ্টা করেন। স্থানটির সঙ্গে যদি ভূতের সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে ওই স্থান বা স্থাপনাটিই হয় দর্শনীয় বস্তু। পৃথিবীতে এমন দর্শনীয় জায়গার অভাব নেই। মজার ব্যাপার ভূতের কারণে জায়গাগুলো রীতিমতো বিখ্যাত! আজকে এই ভিডিওতে আমরা এমনই কিছু বিখ্যাত কিন্তু ভৌতিক জায়গা সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

১) বোরলে রেকটরি:


এটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভৌতিক জায়গা হিসেবে পরিচিত। আসলে এটিকে জায়গা না বলে একটি বাড়ি বলাই ভালো। বাড়িটি যুক্তরাজ্যের বোরলে গ্রামে।

ঘটনা হলো, ১৮৬৩ সালে রেভারেন্ড হেনরি নিজের জন্য বোরলে গ্রামে একুটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িতে স্ত্রী এবং ১৪ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে তিনি বাস করতেন। তাদের সুখের সংসার ছিল। কিন্তু ১৯৩৯ সালে একটি ঘটনা সব তছনছ করে দিল। সে বছর অগ্নিকাণ্ডে বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর থেকেই এই বাড়িতে একের পর এক ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটতে থাকে। কিন্তু অনেকের মতে, এর পেছনে ছিল এক হৃদয় বিদারক প্রেমকাহিনি।

বোরলের নান এক সন্ন্যাসিনীর প্রেমে পড়েন। তারা দুজনে পালিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তারা পরিকল্পনা করে পালিয়েও যান। কিন্তু পথে তারা ধরা পড়েন। এই ঘটনার বিচারে প্রেমিকা সন্ন্যাসিনীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এবং নানকে এই বাড়ির সুউচ্চ প্রাচীর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। মতান্তরে নানকে এই বাড়িতে পুড়িয়ে মারা হয়। এরপর থেকেই বাড়িটি ঘিরে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটতে দেখা যায়। ১৯৪৪ সালে ‘লাইফ’ ম্যাগাজিন এ বিষয়ে একটি ফিচার প্রকাশ করে। এবং এটি করতে গিয়ে ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় এমন কিছু বিষয় ধরা পড়ে যেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। যেমন ফটোগ্রাফার যখন বাড়ির ছবি তুলতে যান তখন বাড়ির ভেতরে দরজার আড়াল থেকে তার দিকে ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারা হয়। কিন্তু অনেক খুঁজেও পরে আর সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশ হলে বাড়িটি নিয়ে কৌতূহলী মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সেই কৌতূহল ছড়িয়ে পরে বিশ্বময়।   

২ ) স্ট্যানলি হোটেলে



স্টিফেন কিং খ্যাতিমান লেখক। তার অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্ররূপ পেয়েছে। সেগুলো দিয়ে ভূতের চলচ্চিত্রও হয়েছে। এমনই একটি গল্পের পল্ট তিনি পেয়েছিলেন স্ট্যানলি হোটেলে। হোটেলটি  কলোরাডোর এস্টেট পার্কে অবস্থিত। তিনি যখন এই হোটেলের ২১৭ নম্বর রুমে ছিলেন তখন  নিজেই অনেক ভৌতিক ঘটনা ঘটতে দেখেন। স্ট্যানলি হোটেল ভূতের কারণে বিখ্যাত। এই হোটেলের স্টাফরা তো বটেই অতিথিরাও বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছেন। স্টিফেন কিংয়ের কথাই বলি, তিনি হোটেলে এক রাতে পাশের কক্ষে কিছু ছেলেমেয়ের হৈ হুল্লোড়ের শব্দ শুনতে পান। বিষয়টি নিশ্চিত হতে সকালে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন হোটেলের অতিথিদের তালিকায় কোনো ছেলেমেয়েই নেই! ঘটনাটি তিনি খুলে বললে স্টাফরা আরো ভয়ঙ্কর তথ্য দেন তাকে।

স্ট্যানলি হোটেলে বিভিন্ন সময় অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়াতো। স্টাফরা প্রায়ই দেখত, হোটেলের বলরুমে রাখা পিয়ানোর কিগুলো নিজে নিজে মুভ হচ্ছে, মিউজিক বাজছে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো হোটেলের মালিক এফও স্ট্যানলির মৃত্যুর পরও তাকে হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরতে দেখা যেত। বিশেষ করে হোটেলের যে বলরুমে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন সেখানেই ছিল তার আনাগোনা। বাথরুমের লাইট হঠাৎ নিভে যাওয়া, রাতে শিশুদের হুল্লোড়, পিয়ানো বাজার শব্দ, দরজা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়া স্ট্যানলি হোটেলের নিয়মিত ঘটনা। এবং এই ঘটনাগুলো যাচাই করার জন্যই সম্ভবত এখনও এই হোটেলে দেশ বিদেশের পর্যটক ভিড় করে।

৩) উডচেস্টারের
ইংল্যান্ডের গ্লস্টারশায়ারে অবস্থিত উডচেস্টারের ভৌতিক বাড়ি হিসেবে খ্যাতি আছে। গত ২০০ বছর আগে এটির কাজ করা হয়েছিল শেষবারের মতো। এরপর রহস্যময় এক অজানা আতঙ্কে বাড়িটি নতুন করে আর মেরামত করা হয়নি। গুজব আছে এখানে যারা কাজ করতে আসেন তারা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মারা যান। স্থানীয় প্রশাসন প্রায় ৭৫ বছর আগে একবার বাড়িটি মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেয়। যে দলটিকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়, সেই দলপ্রধান দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।

এ ঘটনা সবার মনে নতুন করে ভীতির সৃষ্টি করে। তারপরও তার সহকারী সাহস করে কাজ শুরু করে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন উডচেস্টারের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় তিনি পড়ে গিয়ে নিহত হন। মৃত্যুর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তিটি কে আজও এই রহস্যের উদঘাটন হয়নি।

৪) স্কিরিড মাউনটেন ইন:

ইংল্যান্ডের ওয়ালেস স্টেটের স্কিরিড মাউনটেন ইন এমন একটি ভৌতিক স্থান যার নাম শুনলেই মানুষ কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সাহসীরা চান জায়গাটি নিজ চোখে দেখে আসতে। ছুটে যেতে চান সেখানে। ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠা এই বাড়ির নিচে ছিল মদের দোকান এবং ওপরে আদালত। বলা হয়ে থাকে ওয়ালেসের সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত মদের দোকান ছিল সেটি। কিন্তু বাড়িটি এখন আর সেজন্য বিখ্যাত নয়। এটি বিখ্যাত ভূতের কারণে!

মূল ঘটনা হলো, দ্বিতীয় তলায় আদালত কক্ষে বিচারে অনেকের ফাঁসির রায় হতো। দোষীদের সেই কক্ষে একটি বিমের সঙ্গে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হতো। এভাবে প্রায় ১৮০ জন অপরাধীর ফাঁসি দেওয়া হয়। একদিন হঠাৎ এই বাড়িতে দেখতে পাওয়া যায় গ্লাস উড়ছে! আরেকদিন দেখা যায় জানালার কার্নিশে দাঁড়িয়ে কোনো এক আবছা মূর্তি ফাঁস বানাচ্ছে, কখনও আবার হঠাৎ করেই বাড়ির তাপমাত্রা গরম হয়ে উঠতো। এসব যখন ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে থাকে তখন এই বাড়িটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সেই বিমটি আজও রয়েছে। পর্যটকেরা এই বিমটি দেখতে যান।

৫) রোজ জ্যামাইকা:

জ্যামাইকার মন্টেগোর সাগর তীরে রোজ হল এমন একটি স্থান যা প্রথম দেখাতেই ভালো লাগার মতো। কিন্তু রোজ হলের ইতিহাস শুনলে ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে যায়। অনেকে বলেন এখানে এখনও অ্যানি পালমারের অতৃপ্ত আত্মা বাস করে। ভৌতিক এই ইতিহাস অ্যানিকে নিয়েই।

১৮২০ সালে অ্যানি জন পালমারকে বিয়ে করে এখানে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু এর পরের দশকেই অ্যানির স্বামী এবং আরো দুজন ভৃত্য রহস্যজনকভাবে মারা যান। স্থানীয়রা ধারণা করেন অ্যানি জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় অ্যানি পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। ফলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে অ্যানি লাশগুলো দ্রুত সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে ভৃত্যদের বাধ্য করেন। কিন্তু এ কাজে যারা অনীহা প্রকাশ করে রহস্যজনকভাবে তারাও পরে নিহত হন। পরে ভৃত্যরা এক হয়ে  অ্যানিকে মেরে ফেলে। অনেকের মতে শুধু অ্যানি নয়, দাসদের শিশুদের আত্মাও সেখানে ঘোরাঘুরি করে।

৬) টাওয়ার অব লন্ডন:
টাওয়ার অব লন্ডনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস। কিন্তু সেই ইতিহাস প্রায় চাপা পড়ে গেছে ভৌতিক কিছু ঘটনার নিচে। স্থানটি আরেকটি কারণে বিখ্যাত, আর তা হলো টাওয়ারে ৮৮৮২৪৬টি সিরামিকের তৈরি পপি গাছ। এর লাল ফুল দূর থেকে রক্তের স্রোতের মতো দেখায়। অমাবস্যার রাতে টাওয়ারের পুরো পরিবেশ তখন অপরূপ হয়ে ওঠে। সেই সুন্দরের মধ্যেও তখন অনেকে অশুভ কিছুর খোঁজ করেন। যদিও এই গাছগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ সৈনিকদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছিল।

তবে এখানকার ভৌতিক কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়ে এভাবে- ১৫৩৬ সালে তৃতীয় হেনরির সময় এই টাওয়ারে অন্যায়ভাবে রাজকুমারীর শিরচ্ছেদ করা হয়। এরপর থেকেই অনেকে দাবি করেন সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেই রাজকুমারীকে তারা দেখেছেন। এমনকি জায়গাটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাও দাবি করেছেন রাতে কেউ একজন রাজকুমারীর ছিন্ন মাথা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমনটি তারা দেখেছেন। মজার ব্যাপার হলো সেই দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে এখনও অনেকেই সেখানে ভিড় করেন।

Disqus Comments