ব্রাদার আইল্যান্ড মৃত্যু যেখানে হাতছানি দেয়।

ব্রাদার আইল্যান্ড:

ভূতের নাম শুনেও ভয় পায়না এমন ব্যক্তি খুবই বিরল। তবে ভূতের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেও অনেকের অভিমত। তবে সে যতোই সাহসী হোক না কেনো তার মনে একটু হলেও ভূতের ভয় রয়েছে। ছোটবেলায় আমরা গল্পের বই অথবা সিনেমায় দেখেছিলাম ভূত সাধারণত পুরানো বাড়ি, গাছ, শ্মশান, কবরস্থানে থাকে। এক কথায় জনশূন্য এলাকায় ভূতের বসবাস। কিন্তু যদি আপনাকে একটি পুরো দ্বীপের কথা বলা হয়, তাহলে কি আপনার বিশ্বাস হবে? হয়তো হবেনা। আজ আমরা এমন একটি দ্বীপের কথা জানাবো যা পড়ে আপনার গা শিউরে উঠবে।

এই দ্বীপটি নিউইয়োর্কের একদম প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। আলো ঝলমল করা আমেরিকাতে ভূতের কথা মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য। এই দ্বীপটি বর্তমানে নিউইয়োর্ক থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনবসতি শূন্যে ঠেকেছে। দ্বীপটি এতোই নীরব, যা দেখলে আপনি একবার হলেও ভয়ে কেপে উঠবেন।আমেরিকার বাসিন্দারা এই দ্বীপটিকে ব্রাদার আইল্যান্ড বলে চিহ্নিত করে।
দ্বীপটি ঘিরে রয়েছে নানা গল্প। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এই দ্বীপেও বাকি চারটে দ্বীপের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকা ছিলো। ছিলো নিউইয়োর্কের মতো আলো ঝলমল করা একটি শহর। তবে এমন কি হলো যার ফলে এই দ্বীপে এখন আর মানুষ বসবাস করেনা! কেউ বলে এই দ্বীপে মহামারির ফলে ধীরে ধীরে মানবশুন্য হতে থাকে। আবার কারো মতে
এখানে অদৃশ্য আত্মাদের উৎপাত বাড়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে এই দ্বীপটি ছাড়েন। আবার কেউ বলছে এই দ্বীপটি জলের তলায় চলে গিয়েছিলো।


তবে গবেষকদের মত অন্য। তাদের পরীক্ষার ফল বলছে এটি খুব বেশী প্রাচীন দ্বীপ নয়।১৮৮৫ সালের দিকে এখানে মানুষের ঘন যাতায়াত ছিলো। নিউ ইয়োর্কের বাসিন্দারা এই দ্বীপে তাদের রোগ সারাতে আসতো। এই দ্বীপে সাধারণত টাইফয়েড সারানো হতো। কিন্তু এই দ্বীপে অনেক মানুষই তাদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
যার ফলে দ্বীপটি অভিশপ্ত হয়ে যায়। তখন থেকে এই দ্বীপটি নিয়ে মানুষের মনে ভয় জন্ম নেয়। তারপর থেকেই এই দ্বীপ থেকে মানুষ ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকে। আমেরিকার বাসিন্দারা মনে করেন এই নির্জন দ্বীপে প্রেতাত্মার বসবাস রয়েছে।রাতের আধারে এরা শিকারে বেরায় এবং মানুষ খায়।
দ্বীপ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়লে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করে এই দ্বীপ থেকে। এক সময় দ্বীপটি ছেড়ে দলে দলে চলে যেতে শুরু করে মানুষেরা। ফলে হাসপাতালটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এক সময়। এই দ্বীপ সম্পর্কে মানুষের ভীতি দূর করার জন্য ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বসানো হয়।
তখন হেরোইন আসক্ত মানুষের চিকিৎসা চলত এখানে। কিন্তু এই দ্বীপে আনার পর রোগীরা এতোটাই পাগলামি করতো যে, তাদের পাগলামি দেখে অনেক চিকিৎসকই পালিয়ে বেঁচেছেন দ্বীপ থেকে। এরপর আবারও পরিত্যক্ত হয়ে যায় হাসপাতালটি এবং ক্রমে জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে ব্রাদার আইল্যান্ড।
দ্বীপটিকে ঘিরে তারপর থেকেই বের হতে থাকে নানান ধরনের গল্প ও কেচ্ছা কাহিনী। যারা এই দ্বীপে ছিলেন তাদের বর্ণনায় বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক একেক ঘটনা। ভুত-প্রেতের সাক্ষাৎ পাওয়ার দাবিও করেন অনেকে।
দ্বীপ থেকে ফেরত আসা অনেকেই অশুভ আত্মার ভয়ানক সব কর্মকাণ্ডের গল্প বলতে শুরু করে যা শুনে সাধারণের মনে ভয় আরও বাড়তে থাকে। ব্রাদার আইল্যান্ড স্থায়ীভাবে প্রেতের দ্বীপ বলে কুখ্যাতি পায় এক হেরোইন আসক্ত ব্যক্তির কথায়, যাকে চিকিৎসার জন্য এই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে এই দ্বীপ থেকে ফিরে এসে জানায়, এই দ্বীপে রাতে মৃত মানুষেরা চলাফেরা করে আর শোনা যায় রাত ভর কান্নার আওয়াজ। দ্বীপের আনাচে-কানাচে জ্বলে আগুন।
দ্বীপটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হতো স্বপ্নপুরী কিন্তু এর ভেতরে ঢুকলে সবুজ গাছের নিচে অন্ধকারে ডুবে যেতে হতো। এই অন্ধকার পেরিয়ে দ্বীপে চলাচলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া ছিল কঠিন। অনেকেই ভুল রাস্তায় হেঁটে ক্লান্ত হয়ে ঢুকে পড়তো পাথুরে গুহায়। এ দ্বীপের পাথুরে গুহাগুলো কেবল অন্ধকারেই মুখ খুলে বসে থাকে। যখন কেউ এ গুহায় ঢুকত অমনি বন্ধ হয়ে যেত গুহার মুখ।
কিন্তু মাদকাগ্রস্থদের বসতবাড়ি ও আসবাব পত্র সেরকমই পড়ে রয়েছে। বাধ্য হয়ে সরকার ১৯৭০ সালে এই দ্বীপটি নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ভূতের ভয়ে কেউই দ্বীপটি কেনার সাহস পর্যন্ত দেখায়নি। এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বেশ কয়েকবছর দ্বীপটি জন-মানব শুন্যই ছিলো।
২০১০ সালের দিকে ব্রাদার আইল্যান্ডকে হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় আনেন এক শখের পর্যটক। ঘোরা ফেরার মধ্যে তিনি পথ ভুলে পৌঁছে যান এই দ্বীপের কাছে। তিনি তুলে আনেন এই দ্বীপের একের পর এক বোমা ফাটানো ছবি। দ্বীপের ভেতরের চিত্রগুলো দেখে এই দ্বীপটি সম্পর্কে জানতে অনেকেই আগ্রহী হন নতুন করে।

Disqus Comments